হুমায়ূন আহমেদ-এর “আজ চিত্রার বিয়ে” অবলম্বনে পেস্টিচে

বেশ কিছু বছর হয়ে গেল আমি বাংলায় লিখি না। সঠিক বলতে গেলে আমি লেখালেখি পুরোটাই হয়তো ছেড়েই দিয়েছি। ২০১৫ সালে “বিচিত্র” লেখার পর নিজের মধ্যে স্পৃহা জমিয়ে নিজের দ্বিতীয় বই – “বিষণ্ন” যে শেষ করবো তার জন্য মনোবলও যোগাতে পারিনি। এ কয়েকটি বছর কত কিছু যে আমার জীবনে ঘটে গেল তা এক ব্লগ পোস্টে লিখে শেষ করা বৃথা।

যাই হোক লেখালেখি থেকে এত লম্বা বিরতি এক লেখকের জন্য বড়ই হতাশাজনক। এবং বলা বাহুল্য যে আমি কোনও বড় মাত্রার লেখক নই যে আমাকে কেউ মনে রেখেছে আর যারা মনে রাখতো ওরাও হয়তো ভুলে গেছে যে আমি আদৌ লেখালেখি করি। তার সঙ্গে আমিও খেয়াল করা শুরু করি যে আমারও লেখালেখির হাত সঙ্গে ইচ্ছা শক্তিতাও ধীরে ধীরে ফুড়িয়ে যাচ্ছা। তা আবার কানাডা আসার পর বাংল ভাষা চর্চা মটেও করা হয়ই না। মন্ট্রিয়েল শহরে থাকা কারণে উল্টা ফরাসি ভাষাটা শিখা হচ্ছে।

মন্ট্রিয়েল শহরে মেট্রো রেলে আমার যাতায়াত দৈনন্দিন হয়। মেট্রো রেলে ঘুরতে ঘুরতে একদিন শুনি বাংলাদেশেও মেট্রো রেল চালু হয়ে গেছে। যাক দেশে আরও ইতিবাচক উন্নতি হোক এটাই সকলের চাওয়া। মেট্রো রেলে ঘুরাঘুরি আমার অত্যন্ত পছন্দের এক কাজ কারণ আসনে বসে যখন শা-শা করে মেট্রো ছুটছে গন্তব্যের দিকে তখন নিরবে আপন মনে অনেক কিছু ভাবা যায়।

বাংলাদেশে আমার সবচাইতে পছন্দের ঐতিহ্য হচ্ছে আমাদের চির চেনা অমর একুশের বইমেলা। আমার মনে আছে শৈশবকালে প্রতি বছর বইমেলা শুরু হলে বাবাকে নিয়ে প্রথমেই খোঁজ নিতাম সে বছর আমাদের প্রিয় কথাসাহিতিক হুমায়ূন আহমেদ নতুন কি বই লিখেছেন। আজ ১০ বছরের চেয়ে বেশি সময় কেটে গেছে হুমায়ূন আহমেদ স্যারের কোনও বই পড়ি না। কিছু দিন আগেও ওনার লেখা পুরানো বই পড়ে খুশি হওয়ার চেয়ে আরও হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। এর কারণ মানুষটি আমাদের মাঝে আর নেই। বাস্তবতা বড়ই কষ্টের!

মেট্রো রেলে যাতায়াত করতে করতে হঠৎ মাথায় আসলো হুমায়ূন আহমেদ স্যারের অনেক “সম্পূ্র্ণ-মুলোক উপন্যাস” আছে যা উনি ইচ্ছা করেই পাঠকদের কল্পনার কাছে ছেড়ে দিয়ে উপন্যাসগুলোর সমাপ্তি ঘটান। এসব গল্পে কোনও সমাপ্তি নাই জেনে মনের মধ্য আরও অশান্তি জন্মায়, মনে হয় “এ কি পড়লাম… এর শেষ নাই কেন… ধুর!”

এমন একটি উপন্যাস “আজ চিত্রার বিয়ে”। বইটি হুমায়ূন আহমেদ স্যারের আরও পরিচিত “শঙ্খনীল কারাগার”, “নন্দিত নরকে”, হিমু বা মিসির আলীর মত অত বেশি জনপ্রিয় না হলেও আমার মনের মধ্যে এক বড় ধরণের অশান্তি জন্ম দেয় যখন বইটি শেষ করি। জানতে বড়ই ইচ্ছা করে শেষে চিত্রার কি হলো, ওর বাবা ও মার কথা কি হলো, শেষে কি ওর বিয়ে হয়? – এই বড় প্রশ্নটি “আজ চিত্রার বিয়ে” নামক বইটি পড়েও উত্তরটি পেলাম না কখনও।

প্রথমে বলে রাখি আমি “আজ চিত্রার বিয়ে” বইটির প্যাস্টিচে লিখছি নিজের কোনও ব্যক্তিগত লাভের আশায় না। আর হুমায়ূন আহমেদ স্যারকে মন থেকে সম্মান জানায় লিখছি। তবে হ্যা একটি লাভ মাথায় নিয়ে লিখছি এ প্যাস্টিচে সেটি হচ্ছে আমার লেখালেখির হাত ফিরে পাবার আশায় যেন আমার দ্বিতীয় বইটি পুনরায় আবার লেখা শুরু করে শেষ করতে পারি। আমার জন্য দোয়া করবেন।

প্যাস্টিচে, ইংরেজিতে “pastiche” শব্দটির সঙ্গে কেউ পরিচিত না থাকলে, বলে রাখা ভালো এর অর্থ – “অন্য গ্রন্থকার বা শিল্পীর অনুকরণে রচিত সাহিত্য বা শিল্প” সূত্রঃ গুগল।

এখানে আমি “আজ চিত্রার বিয়ে” উপন্যাসে তার গল্পটির মূল ধারা ও চরিত্রের ব্যক্তিত্ব অনুসরণ করে গল্পের সিক্যুয়েল তৈরি করার সল্প এক প্রচেষ্ঠাই শুধু। কেমন হবে জানি না, বানান ও ব্যাকারণে অনেক ভুল থাকতে পারে কিন্তু আমার লেখার উদ্দেশ্য হচ্ছে সিক্যুয়েলটি পড়ে সবাই যেন আনন্দ পায় তাই ভুলগুলো দয়া করে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আমি নিজেও এসব খুটিনাটির উপর নজর দেব না কারণ এটি আমার কেবল মাত্র লেখালেখিতে ফিরে যাওয়ার এক মহরা।

গল্পের প্রেক্ষাপটঃ

সবাইকে প্রথমে বলে রাখি যদি মূল উপন্যাস- “আজ চিত্রার বিয়ে” বইটি না পড়ে থাকেন, ভালো হয় এই প্যাস্টিচে পড়ার আগে একটু ঢু মেরে আসেন কারণ গল্পটি পরিপূর্ণ উপভোগ করতে চেলে এটিই শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। গল্পের মূল চরিত্র সহ নতুন কিছু চরিত্র যোগ করা হবে। গল্পের স্বার্থে এটি শুরু হবে মূল উপন্যাস হতে ৫ বছর পর। “আজ চিত্রার বিয়ে” প্রকাশিত হয় ২০০১-এ, ধরে নিচ্ছি চিত্রার বিয়ে হয় ২০০১ সালে তাই আমার গল্পটি শুরু হবে ২০০৫ থেকে। তার সঙ্গে যে অভিজাত মেরিন ইন্জিনিয়ারের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো, তা হয় এবং সে এখন বাংলাদেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ও সংসার করছে।

এখান থেকে আমার পরের পোস্ট দিয়ে শুরু করবো গল্প, আর হ্যা “আজ চিত্রার বিয়ে” বইটির সিক্যুয়েলের জন্য একটি নাম তৈরি করেছি, তা হচ্ছ-

“কাল চিত্রা ফিরবে”